জোড়া রথ রংপুর কালিতলা ও শলুয়া আয়োজিত জগন্নাথদেবের রথ যাত্রা

রথযাত্রা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাচীন হিন্দু উৎসব, যা প্রধানত ভগবান জগন্নাথ (বিষ্ণুর এক রূপ), তাঁর বড় ভাই বলরাম এবং বোন সুভদ্রাকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। এই উৎসব পালনের বেশ কিছু কারণ ও তাৎপর্য রয়েছে:
ভগবানের নগর ভ্রমণ: সবচেয়ে প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, আষাঢ় মাসের শুক্ল দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা রথে চড়ে তাঁদের মাসির বাড়ি (গুণ্ডিচা মন্দির) যান। মাসির বাড়িতে তাঁরা সাত দিন থাকেন এবং তারপর আবার নিজ মন্দিরে ফিরে আসেন। এই মাসির বাড়ি যাওয়া বা নগর ভ্রমণের মধ্য দিয়ে দেবতারা ভক্তদের কাছে আসেন, যাতে সব স্তরের মানুষ, বিশেষ করে যারা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারে না, তারাও ভগবানের দর্শন লাভ করতে পারে। এটি ভক্ত ও ভগবানের মিলন উৎসব।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও পৌরাণিক কাহিনী:
কথিত আছে, একবার বোন সুভদ্রা দ্বারকা নগরী দেখতে চেয়েছিলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ এবং বলরাম তাঁকে রথে চড়ে নগর ভ্রমণে নিয়ে যান। এর পর থেকেই প্রতি বছর রথযাত্রা আয়োজিত হয় বলে মনে করা হয়।
আরেকটি বিশ্বাস অনুযায়ী, স্নানযাত্রার পর জগন্নাথদেব অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৫ দিন একান্তবাসে সেবা-শুশ্রূষার পর তিনি সুস্থ হয়ে সকলকে দর্শন দেন। এই আনন্দেই ভক্তরা রথযাত্রার আয়োজন করেন।
আধ্যাত্মিক তাৎপর্য:
রথের দড়ি টেনে ভগবানকে আকর্ষণ করা বা রথের রশি স্পর্শ করা অত্যন্ত পূণ্যময় বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এর মাধ্যমে মনস্কামনা পূর্ণ হয় এবং ভগবানের বিশেষ কৃপা লাভ হয়।
রথযাত্রা হল আত্মার মোক্ষলাভের যাত্রা, যেখানে ভগবান স্বয়ং ভক্তদের সঙ্গে রাস্তায় নেমে আসেন। এটি মানব জীবনের যাত্রার প্রতীক এবং আত্মশুদ্ধির একটি উপায়।
এই উৎসব সামাজিক সমতা ও ঐক্যের প্রতীক। এখানে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে রথের রশি টানে, যা সমাজের ভেদাভেদ ভুলে একতার বার্তা দেয়। এমনকি, পুরীর রাজা নিজে রথের সামনে ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করেন, যা বিনয় ও সকলের প্রতি সম্মানের প্রতীক।
সাংস্কৃতিক ও সামাজিক গুরুত্ব:
রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি একটি বিশাল জনসমাগমের উৎসব। এই সময় দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ভক্ত পুরীতে আসেন।
রথযাত্রার সাথে গান, বাজনা, নৃত্য এবং আনন্দ-উচ্ছ্বাস জড়িত থাকে, যা একটি মিলনমেলায় পরিণত হয়।
মোটকথা, রথযাত্রা হলো ভগবান জগন্নাথের ভক্তদের প্রতি অপার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ এবং একটি সার্বজনীন উৎসব, যা ভক্তি, মিলন ও আধ্যাত্মিকতার বার্তা বহন করে।