৮০ বছর বয়সের মায়ের মুখে মুখস্থ্য বাল্যশিক্ষা
Автор: Neel Dada
Загружено: 2022-08-12
Просмотров: 1646
৮০ বছর বয়সের মায়ের মুখে মুখস্থ্য বাল্যশিকা
Youtube Link : / @neeldada
Facebook Link : / neelkantho.barman
Facebook Page Link : / neelbrmnofficial
Instragram Link :https://www.instagram.com › neelbrmn
বাল্যশিক্ষা বইয়ের বর্ণনা
বাল্যশিক্ষা’ একটি পুস্তকের নাম; যেটি প্রণয়ন করেছিলেন রামসুন্দর বসাক! যদিও প্রণয়নকারী হিসেবে পুস্তকের প্রচ্ছদে রামসুন্দর বসাকের নামই লেখা আছে, কিন্তু এখানে অন্তর্নিহিত আছে ভিন্ন ঘটনা, যা উল্লেখ না করলে নয়। রামসুন্দর বসাক ছিলেন তখনকার সময়ে দরিদ্র এক শিক্ষক। তার দারিদ্র্য লাঘবে মহামতি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ভাবছিলেন কীভাবে কী করা যায়। এই সময় শৈশবকালে শিশুশিক্ষার জন্য একটি বইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। অবশেষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজেই বাল্যশিক্ষা বইটি রচনা করে রামসুন্দর বসাকের নামে ছাপিয়ে দিলেন। অতঃপর বঙ্গদেশ (পশ্চিমবঙ্গ পূর্ববঙ্গ), আসাম ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন স্থানে লাখো কপি বিক্রির মাধ্যমে রামসুন্দর বসাকের পরিবারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে আসে। এখানে রামসুন্দর বসাকের মতো কেবল একজন দরিদ্র শিক্ষকের দারিদ্র্য দূরীকরণের মধ্যে এই বইয়ের বিশেষত্ব রয়েছে তা কিন্তু নয়, সেই ১৮৭৭ সালে প্রথম প্রকাশিত এই ছোট্ট ‘বাল্যশিক্ষা’ বইটি তখনকার সময়ে লক্ষ কোটি নিরক্ষর মানুষের মাঝে জ্ঞান বিতরণের উৎস ছিল। যার আবেদন কিন্তু এখনকার সময়ে, এই যুগেও রয়েছে। যেমন- তান ধর গান কর,/ দান যার মান তার,/ রবি যায় কবি গায়,/ গাড়ি পায় বাড়ি যায়,/ কৃশ তনু বৃষ ধনু,/ ধৃত যেই মৃত সেই,/ কালো কেশ ভালো বেশ,/ দিলে বিধি মিলে নিধি,/ দৈব বাণী বৈধ জানি,/ রোগ যত ভোগ তত।
এখানে উল্লেখ্য ‘বাল্যশিক্ষা’ বইটি নিয়ে আজকের লেখায় কোনো প্রকার গ্রন্থ সমালোচনা বা বিশেষ আলোচনা করা উদ্দেশ্য নয়। বইটিতে শিশুশিক্ষার আবেদন যে এখনো রয়েছে তা জানানো। যেমন- বইটির চরণগুলোর মাধ্যমে শিশুদের একদিকে যেমন বর্ণ, শব্দ, বাক্য, চিহ্ন শেখা যায়; অন্যদিকে ছন্দ ও অন্ত্যানুপ্রাসের মাধ্যমে রচিত হওয়ায়, শিশুদের পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে প্রতিটি বাক্য হচ্ছে উপদেশমূলক শব্দ সমষ্টি এবং নৈতিক শিক্ষায় ভরপুর। কষ্টিপাথরের মূল্য সদৃশ বইটি সেই সময় সকল স্তরের মানুষের মনোজগতে এনেছিল আমূল পরিবর্তন। সেই কালে বিদ্যালয়ে চৌকাঠের ভেতরে পা রাখতে গিয়ে, বিভিন্ন কারণে ব্যর্থ হওয়া মানুষগুলো কেবল বাড়িতে বসে, ক্ষুদ্র পুস্তিকাটি রপ্ত করে বিশুদ্ধ উচ্চারণে পড়তে শিখেছে, সঠিক প্রবাহে লিখতে শিখেছে, সুশৃঙ্খলবদ্ধ শব্দে কথা বলতে শিখেছে। এমনকি দৈনন্দিন জীবনে সুশৃঙ্খল রীতিনীতি, নিয়মকানুন মেনে চলতেও সহায়ক হিসেবে কিংবা পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করেছিল পুস্তিকাটি। এককথায় সহজ থেকে কঠিন, জানা থেকে অজানা রীতিতে রচিত পুস্তিকাটি অত্যন্ত সুন্দর চমৎকার ও আদর্শ ছিল। যা শিক্ষাক্ষেত্রে অমূল্য রতনই বলা যায়।
এমন এক সময় ছিল, সকল শ্রেণির সকল পেশার মানুষ, বাল্যকালে বিশেষত শৈশব সময়ে রামসুন্দর বসাক প্রণীত ‘বাল্যশিক্ষা’ বইটি পড়ত বা পড়ার জন্যে মা-বাবা-অভিভাবক তাদের শিশুদের জন্য কিনে এনে পড়তে দিত। সেই সময় বিদ্যালয় প্রবেশের পূর্ববর্তী কিংবা বিদ্যালয়ে ভর্তির পর, শিশুর প্রথম শিক্ষার প্রথম বই হচ্ছে এই ‘বাল্যশিক্ষা’। আমাদের পরিবারের কথা যদি বলি, আমার পিতামহ থেকে আমার সন্তান পর্যন্ত চার পুরুষ এই বইয়ের বাস্তব সাক্ষী।
এই বইয়ের আকর্ষণ হচ্ছে ছন্দবদ্ধপদ এবং অন্ত্যানুপ্রাসযুক্ত চরণের সমন্বয়ে উপদেশমূলক নীতিবাক্যসমূহ। যা শিশুদের বর্ণ, শব্দ, ভাষা শেখানোর উপযুক্ত শিক্ষক; আচরণ শেখার অভিভাবকও বলা যেতে পারে এই পুস্তিকাটিকে।
আবার বিভিন্ন ফলার চিহ্ন ব্যবহারে গঠিত শব্দ অতি চমৎকার। তবে শব্দ বাক্য সুমধুর হলেও এখনকার সময়ে কিছুটা কাঠিন্য মনে হতে পারে। উল্লেখ্য, সেই সময়ে শব্দগুলো বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত ছিল। যেমন-
ঐক্য নাই সখ্য চাই,
ভাগ্য যার রাজ্য তার,
পদ্য পড় গদ্য কর,
বাহ্য ভয় ন্যায্য নয়,
ভদ্র যারা নম্র তারা,
ব্রত করে শ্রম হরে,
ভল্ল হাতে মল্ল মাতে,
তর্ক করে দর্প হরে,
মূর্খ নরে গর্ব করে।
সব শেষে মহারানী ভিক্টোরিয়াকে নিয়ে লেখা, যিনি ইংল্যান্ডের অধিশ্বরী ও ভারতের সম্রাজ্ঞী ছিলেন, চৌষট্টি বছর রাজত্ব করে একাশি বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
অনেক বছর আগে রচিত হলেও এই বই এখনো শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্ব বহন করে। অথচ হীরকমূল্যস্বরূপ এমন পুস্তিকাটি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গেল। সত্যি কথা বলতে, হারিয়ে গেল বললে ভুল হবে, কারণ রাজনৈতিক আর ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ বিবেচনা করে লুকিয়ে ফেলা হলো এমন মায়া লাগানো সাড়াজাগানো পুস্তিকাটি। এতে যেটুকু সুদূরপ্রসারী অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আমি আমার এলাকার নতুন প্রজন্মকে সেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে বিরত রাখতে চেষ্টা করেছি। তাই বিগত বছরগুলোতে প্রায় দুইশ’-আড়াইশ’ বই এনে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ও পাড়ায় পড়ুয়াদের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবনের ভেতরে বাইরে, দেয়ালে ও পিলারে উল্লেখিত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক বাক্যগুলো লিখাতে সমর্থ হয়েছি। আর বই বিতরণ বা বিদ্যাদান করেছি এই কথা বলার জন্যে আজকের এই লেখা নয়। শুরুতেই বলেছিলাম ‘বাল্যশিক্ষা’ বই নিয়ে কোনো ধরনের গ্রন্থ সমালোচনা বা বিষয়বস্তু সম্পর্কিত বিশেষ আলোচনা করা উদ্দেশ্য আমার নয়। আগেকার সময়ে যারা পড়েছেন, তাদের পুরনো হারানো স্মৃতিতে নিয়ে যাওয়া, একই সঙ্গে নতুন প্রজন্ম যারা তাদের এই বইয়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই হচ্ছে আজকের লেখার মুখ্য উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে এই উদ্দেশ্যের সঙ্গে একটি দাবিও সংযোজন করতে চাই। পুনরায় শিশু শিক্ষার্থীদের কাছে ফিরিয়ে আনা হোক হীরকসদৃশ অমূল্য রতন বাল্যশিক্ষা পুস্তিকাটি। প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর ক্যারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করা হোক বাল্যশিক্ষা বইটি। এতে আলোকিত হবে মানুষ, সমৃদ্ধ হবে জাতি, উন্নত হবে দেশ।
(লেখা গুলো সংগৃহিত)
Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео mp4
-
Информация по загрузке: