অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই গোবরডাঙ্গায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য গুলি আজও দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়

উত্তর ২৪ পরগণা জেলার গাইঘাটা থানার অন্তর্গত গোবরডাঙ্গা ইছাপুর গ্রামে
শ্রী গোবিন্দ জিউ মন্দির অবস্থিত | এই মন্দিরটি প্রায় ৪৫০ বছরের পুরানো |
জনশ্রুতি আছে যে , ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে জমিদার রঘুনাথ রায় এই মন্দিরটি
প্রতিষ্ঠা করেন |
গোবরডাঙ্গা অঞ্চলের জমিদারির গোড়াপত্তন করেন রাঘব পণ্ডিত,
যিনি মুঘল সম্রাট আকবরের কাছ থেকে “ চৌধুরী “ উপাধি পেয়েছিলেন |
রাঘব পণ্ডিতের পৌত্র রঘুনাথ ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে এই গোবিন্দ মন্দির
নির্মাণ করেন | পরবর্তীতে, মন্দিরটি জীর্ণ হয়ে গেলে, এর পাশে আরেকটি
নতুন মন্দির তৈরি করে প্রাচীন বিগ্রহ ঐ মন্দিরে প্রতিস্থাপন করেন | গোবিন্দ
জিউ ঠাকুরের মূর্তি কষ্টিপাথরের তৈরি |
এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর দোলপূর্ণিমার পরদিন মেতে
ওঠেন গাইঘাটার ইছাপুর-সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ, ঐ
সময় আবিরের রঙে রঙ্গিন হয়ে ওঠেন তাঁরা |
কয়েকশো বছর ধরে চলে আসা প্রথা অনুযায়ী ঐ মন্দিরে দোল
পূর্ণিমার পরদিন সকালে প্রথমে গোবিন্দ ঠাকুরের পুজা হয় এবং এরপর
পুরোহিত গোবিন্দ ঠাকুরের পায়ে আবির দেওয়ার পর শুরু হয় রঙ খেলা ,
পাশাপাশি একে অপরকে আবির মাখাতে শুরু করেন |
বিশেষ আকর্ষণ ঐ প্রাচীন মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার কাজ
করা নবরত্ন মন্দির আজও সামহিমায় দাঁড়িয়ে আছে |

গোবরডাঙ্গা জমিদার বাড়ি এই জেলার আর একটি ঐতিহ্যবাহী স্থান| | মুখোপাধ্যায় জমিদার পরিবাররের প্রথম বাড়িটি আনুমানিক ১৭১০ বা
১৭১১ খ্রিস্টাব্দর দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল | শরিকি বিবাদে সেই বাড়ি পুরোপুরি
ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে ও ঐ সম্পতি বিক্রি করে দিয়েছে |



অষ্টাদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যশোরের শ্যামরাম মুখোপাধ্যায়
ইংরেজদের কাছ থেকে নিলামে গোবরডাঙ্গার জমিদারি কেনেন | তাঁর পুত্র
কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় দক্ষ হাতে জামিদারি পরিচালনা করেছিলেন | তিনি
১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ৫০ বছর বয়সে মারা যান | এই পরিবার মূলত কৃষি ও ব্যবসা
মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছিলেন | পাশেই প্রসন্নময়ী কালী মন্দির এবং ১২ শিব মন্দির আছে | তার পাশেই সেইসময়ের নির্মাণ করা সূর্য ঘড়ি
এবং সামনে খোলা মাঠে বাংলা বছরের ১ লা বৈশাখ এক দিনের জন্য
মশলা মেলা বসে | দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে যায়, প্রায় কয়েক কোটি টাকার
কেনা বেচা হয় ঐ সময়ে |