Globalization part-2 বিশ্বায়নের প্রভাব। পর্ব-২
Автор: রাষ্ট্রবিজ্ঞান দর্পণ, Rastrobiggan Darpon
Загружено: 2020-04-09
Просмотров: 6939
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশ্বায়নের প্রভাবকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানিদের মধ্যে মতবিরোধ লক্ষ করা যায়। বস্তুত বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা কালে এর সুফল ও কুফল উভয় দিকেই ফুটে ওঠে।
সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভাব ; বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত মানুষকে মানব সমাজের বিভিন্ন সমস্যার গুরুত্ব ও প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন ও সতর্ক করা সম্ভব হয়েছে। পরিবেশ দূষনের ভয়াবহ পরিস্থিতি, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, বিভিন্ন দেশের দুঃসহ দারিদ্রতা প্রভৃতি সামাজিক সমস্যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলাপ-আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। বিশ্বায়নের কল্যাণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সামাজিক আন্দোলনগুলি অনেক শক্তিশালী এবং বিশ্বজুড়ে প্রসারিত হতে পেরেছে।
বিশ্বায়নের ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে মৌলবাদি প্রবনতা উপজাতিগত বিরোধ, গোষ্ঠীগত বিরোধ, যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। লন্ডনে কৃষ্ণাঙ্গ বনাম শ্বেতাঙ্গ, উত্তর আয়ারল্যান্ডে ক্যাথলিক বনাম প্রটেস্ট্যান্ট, প্যালেস্টাইনে ইহুদি বনাম মুসলমান, এছাড়া ফিজি, অফ্রিকা, ভারত প্রভৃতি দেশের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। মৌলবাদী শক্তিগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ; বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা তথা জাতি রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে নতুন নতুন অতিজাতীয় সংগঠনের উৎপত্তি ও প্রসার ঘটেছে। ফলে ক্ষমতর বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছে এবং বহুমুখী কর্তৃত্ব এর উদ্ভব ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাক্তির স্বাতন্ত্র্য ও পছন্দের পরিধি সম্প্রসারিত হয়েছে। ব্যাক্তি এখন উপযোগিতা বিচার করে কোনো কর্তৃত্ব এর প্রতি কতটা আনুগত্য প্রদর্শন করতে হবে তা স্থির করতে সক্ষম হয়েছে।
বিশ্বায়নের ফলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমিকতা তথা জাতিরাষ্ট্রের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব হ্রাস পাওয়ায় লগ্নি পুঁজির অবাধ বিচরণ ও লুণ্ঠনকে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বিশ্বায়ন ব্যবস্থার শরিক হতে গিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ওপর সরকারি ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হয়েছে। শিক্ষা স্বাস্থ্য, এবং অন্যান্য পরিষেবা মূলক কার্যে সরকারি ব্যয় বরাদ্দ হ্রাস করতে হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলির বেসরকারিকরন ঘটাতে হয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব এর পরিবর্তন ঘটলেও রাষ্ট্রের বিলুপ্তির সম্ভাবনা এই মুহুর্তে নেই।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ; বিশ্বায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলি উত্তরের শিল্পোন্নত দেশ থেকে মূলধন ও উন্নত মানের কারিগরি কলাকৌশল আমদানি করছে এবং কাঁচামাল ও অন্যান্য পন্য যা উন্নত দেশে সহজলভ্য নয় সেগুলি রপ্তানি করছে। এর ফলে উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশগুলো যেমন লাভবান হচ্ছে, তেমনি বিশ্ব বানিজ্যের পরিমাণও বেড়ে গেছে। এর ফলে পৃথিবীর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবীর উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এই অবস্থা ঘোচাতে বিশ্বব্যাঙ্ক, IMF, প্রভৃতি সংস্থার থেকে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ঋণ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ঋণের পূর্বশর্ত হিসাবে কাঠামোগত সংস্কার কার্যকর করার কথা বলা হচ্ছে। যার অর্থ হল শিল্পক্ষেত্রের বেসরকারীকরন, আন্তর্জাতিক বানিজ্যের প্রসার ঘটানো, বিদেশী লগ্নিকারিদের কাছে দেশের বাজারকে উন্মুক্ত করে দেওয়া। দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন, বিনিয়োগ, দাম ইত্যাদির ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা, বহুজাতিক সংস্থাগুলিকে অবাধে বানিজ্য করার সুযোগ দেওয়া ইত্যাদি। এইসবের যৌথ প্রভাবে দরিদ্র্য দেশগুলি নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।
সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ; বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতিক আদান-প্রদান বেড়েছে। প্রতিটি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এক জায়গায় আটকে না থেকে তা ক্রমশ উন্নত ও সময় উপযোগী হয়ে উঠছে। বিশ্বজুড়ে সংস্কৃতির এই আদান-প্রদান ও বিস্তার মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করছে। বিশ্বায়নের ফলে বিভিন্ন দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মৃত্যু ঘটছে। বিশ্বায়নের যুগে জাতীয় খাবার, জাতীয় পোশাক বলে কিছু নেই। গায়ে জিন্সের জামা-প্যান্ট, হাতে কোল্ড ড্রিংকস, কানে স্মার্টফোন, মুখে ফাস্টফুড এখন পৃথিবীর যেকোনো দেশের যে-কোনো অঞ্চলের একটি সাধারণ ব্যাপার। বলা যায় বিশ্বায়নের প্রভাবে সংস্কৃতির বানিজ্যিকরন ঘটেছে এবং এক নতুন ধরনের সংস্কৃতি বিশ্বজুড়ে বিস্তার লাভ করছে। পশ্চিমী দেশগুলি বানিজ্যের স্বার্থে নিজেদের ভোগবাদী সংস্কৃতিকে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সংস্কৃতির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। টিভি সিরিয়াল এবং অন্যান্য আধুনিক সামাজিক গণমাধ্যমের সাহায্যে যৌনতা, হিংসা, উত্তেজক ফ্যাশন শো, বিজ্ঞাপনে নারীদেহের সৌন্দর্যকে ব্যবহার প্রভৃতি বিভিন্নভাবে একটা বিকৃত সংস্কৃতিকে আদর্শ সংস্কৃতি হিসাবে তুলে ধরে কিশোর-কিশোরী তথা সমগ্র মানব জাতিকে বিপদগামী করে তুলেছে।
তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রভাব ; বিশ্বায়নের ফলে তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক ব্যবধান আর আগের মত নেই। ফলে এক দেশের মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার এই অভাবনীয় উন্নতি উৎপাদন দক্ষতার যেমন বৃদ্ধি ঘটিয়েছে তেমনি পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করেছে।
বিশ্বায়নের যুগে উন্নত তথ্য-প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার দৌলতে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে থাকা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। শুধু সন্ত্রাসবাদ নয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতির ফলে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ আজ আঞ্চলিক বা জাতীয় সীমানার গন্ডি অতিক্রম করে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ছে। উদাহরণ হিসাবে বর্তমান সময়ের করোনা ভাইরাসের কথা বলা যেতে পারে। শুরুতে এই রোগ চীনের উহান প্রদেশে আবদ্ধ থাকলেও বর্তমানে তা আজ সাড়া পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দেখা যাচ্ছে যে বিশ্বায়নের যেমন কিছু ভালো দিক আছে তেমনি অনেক খারাপ দিকও আছে। অবশ্য যতটুকু ভালো দিক আছে তার সিংহভাগই ভোগ করছে উন্নত দেশগুলি। ফলে বিশ্বায়নের ইতিবাচক প্রভাবের থেকে নেতিবাচক প্রভাবেই অনেক বেশি।

Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео mp4
-
Информация по загрузке: