শৈশবের প্রাথমিক পর্যায়ে নৈতিকতার উন্মেষ তেমন হয় না। কারণ এ বয়সে ন্যায়-অন্যায়জনিত বিমূর্ত নীতিগুলোর অর্থ বোঝার মতো সূক্ষ্ম চিন্তাশক্তির বিকাশ হয় না। একইভাবে নীতিগুলো মেনে চলার তাদিগও শিশুরা অনুভব করে না। কারণ নৈতিক নীতিসমূহ মেনে চলার মধ্যে দিয়ে সে নিজেও দলের সঙ্গীরা কিভাবে উপকৃত হবে তা বুঝতে পারে না।
নৈতিক আদর্শমান কেন অনুসরণ করা উচিত ও জীবনে এর কি প্রয়োজন? সে সম্পর্কে শিশুরা সম্পূর্ণ অজ্ঞ সেজন্য সঠিক পরিস্থিতিতে কিভাবে সৎ আচরণ করতে হয় তা তাদের অবশ্যই শিখতে হবে। শিশুরা কোনো একটি কাজ করে সত্যি কিন্তু কেন কাজটি করল বুঝতে পারে না। শিশু মেধাবী অথবা স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন যাই হোক না কেন এ বয়সে শিশুদের স্মরণশক্তি প্রখর নয়। অতএব সমাজ স্বীকৃত আচরণ শিখতে তাদের অনেক সময়ের প্রয়োজন ও অনেক কষ্ট স্বীকার করতে হয়। একদিন শিশুকে যদি কোনো কাজ করতে নিষেধ করা হয় তবে দেখা যায় যে পরের দিন অথবা অনেক দিন পরে কোন্ কাজটি করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল তা বেমালুম ভুলে গেছে। অতএব শিশু কথা না শুনলে বয়স্ক ব্যক্তিরা মনে করেন যে শিশুর আচরণটি ইচ্ছাকৃত অবাধ্যতা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা বিস্মৃতির পরিচায়ক।
শৈশবের নৈতিকতা বিকাশকে পিয়াজে বাধ্যতামূলক নৈতিকতা আখ্যা দিয়েছেন। এ সময় শিশুরা যুক্তি বা বিচার বিবেচনা না করে স্বতঃক্রিয়ভাবে (যান্ত্রিকভাবে) নীতিমালা মেনে চলে। তারা পরিবারের প্রধানকে সর্বশক্তিমান ব্যক্তিত্ব মনে করে। কোন্ উদ্দেশ্যে একটি কাজ করা হয়েছে তা খেয়াল না করে কাজের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একটি কাজকে ন্যায় অথবা অন্যায় মনে করে। তাদের কাছে একটি কাজ অন্যায় হবে তখন যখন কাজটি করার জন্য মানুষ শাস্তি প্রয়োগ করবে।
পিয়াজে প্রবর্তিত শৈশবকালীন নৈতিকতা বিকাশের স্তরটির বিশদ ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কোলবার্গ (Kohlberg)" আরও দুটি পর্যায় এর সাথে যুক্ত করেছেন। তিনি প্রথম পর্যায়ের নাম দিয়েছেন 'প্রথা-পূর্ব নৈতিকতা' (preconvention)। একটি কাজ করলে তাদের দেহের উপর এর ফলাফল এসে পড়বে কিনা তা এই পর্যায়ে শিশুরা অবাধ্যতার পরিণাম শান্তি এ নীতিতে বিশ্বাসী। কারণ বিচার
করে কাজটি ন্যায় দ্বিতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জনের প্রত্যাশায় এ বয়সের শিশুরা সমাজ স্বীকৃত নীতিমালা মেনে চলে। শৈশব পার হলে শিশুদের যদি সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে অথবা অন্যায় তা বিচার করে।