নাথ ধর্ম, নাথ সম্প্রদায় ও নাথ সাহিত্য কী? Nath Community community and Nath religion । BCS Bangla
Автор: BCS School
Загружено: 2023-07-10
Просмотров: 18089
নাথসাহিত্য
বৌদ্ধ ধর্মমতের সঙ্গে শৈবধর্ম মিশে এক নতুন ধর্মমতের উদ্ভব হয়েছিল, সে ধর্মের নাম ছিল নাথ ধর্ম। নাথ ধর্মের আচার-আচরণ ও নাথযোগীদের কাহিনীভিত্তিক সাহিত্য হলো নাথসাহিত্য।
এটি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ ধারা।
নাথ ধর্মের অনুসারীরা ছিলেন শিব উপাসক এক শ্রেণির যোগী সম্প্রদায়। হাজার বছর আগে ভারতবর্ষ জুড়ে এ শ্রেণির যোগীদের খ্যাতি ছিল।
এ সাহিত্য দুটি ধারায় বিকাশ লাভ করে: একটি হলো সাধন-নির্দেশিকা। এগুলো সাধনার গোপনীয়তা রক্ষার্থে কতগুলো রহস্যজ্ঞাপক পদ বা দোহা।
এতে প্রচুর পারিভাষিক শব্দ ও বাক্য রয়েছে এবং বাক্যগুলো উপদেশমূলক।
দ্বিতীয় ধারার সাহিত্য হচ্ছে গাথাকাহিনী বা আখ্যায়িকা; এতে সিদ্ধাদের সাধনজীবনের অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ বা সিদ্ধিলাভের কথা বলা হয়েছে।
এই শ্রেণির কাহিনীর লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে বিশেষ ধর্মপথের দিকে আকৃষ্ট করা।
নির্দেশিকামূলক পদ বা দোহাগুলো সংকলন বা প্রত্যক্ষ রচনা হিসেবে প্রকাশ পেয়েছিল। গোরক্ষসংহিতা এবং যোগচিন্তামণি এরূপ দুটি সংকলন।
কাহ্নপা ও জালন্ধরীপা’র রচনা হিসেবে কিছু দোহার সন্ধান মিলেছে এবং চর্যাগীতিকার দোহা সংকলনে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
গোরক্ষপন্থীদের মধ্যে গোরক্ষনির্দেশিকা হিসেবে যা প্রচলিত তা শ্রুতিনির্ভর সংকলন। মীননাথ বা গোরক্ষনাথের ব্যক্তিগত কোনো রচনা নেই।
গাথা-কাহিনীগুলো অপেক্ষাকৃত পরবর্তীকালের রচনা; পূর্বধারার সঙ্গে এগুলোর কালিক ব্যবধান অন্তত দুশতকের।
এই ধারার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য রচনা হলো গোরক্ষবিজয়। এটি সম্পাদনা করেন আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ।
এ ছাড়া চন্দ্রকুমার দে’র সংগৃহীত শুকুর মোহাম্মদের ‘গোপীচাঁদের সন্ন্যাস’, রাজা মানিকচন্দ্রের গীত, ময়নামতীর গান বা গোপীচন্দ্রের গান একই ধারার ত্রিমুখী কাহিনী।
বিভিন্ন স্থানিক সংস্করণে পৃথক পৃথকভাবে প্রকাশিত হলেও এগুলো মূলত একই কাহিনীর রকমফের।
নাথসাহিত্যের এই ধারাটি সাধারণ মানুষের কাছে বিশেষ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
রূপকের মাধ্যমে নিষ্ঠা ও চরিত্রশুদ্ধির মহান আদর্শকে এ ধরনের কাহিনীতে উচ্চে তুলে ধরা হয়েছে।
ফলে নীতিমূলক লোকশিক্ষার গৌরবে এসব কাহিনী সহজেই সমাদৃত হয়েছে। বাংলা ছাড়াও হিন্দি, ওড়িয়া, মারাঠি, গুজরাটি, নেপালি ও তিববতি ভাষায় গাথামূলক কাহিনীগুলির আলাদা আলাদা সংস্করণ পাওয়া যায়।
গোরক্ষবিজয় কাহিনীতে একদিকে গোরক্ষনাথকে অবিচল যোগীর আদর্শে চিত্রিত করা হয়েছে, অন্যদিকে বিবৃত হয়েছে মীননাথের চারিত্রিক অধঃপতনের কাহিনী।
একবার জলটুঙ্গি ঘরে মাছের রূপ ধরে শিবকথিত মহাজ্ঞান গোপনে শোনার জন্য এবং অন্যবার গৌরীর সহজ মায়ায় অতি সহজে বশীভূত হয়ে অসংযম প্রকাশের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রথম অপরাধে শিব-শাপে তিনি মহাজ্ঞান বিস্মৃত হন এবং দ্বিতীয় অপরাধে তাকে কদলী নামক প্রমীলারাজ্যে ষোলোশত নারীর বাঁধনে নীতিভ্রষ্ট ভোগজীবন যাপন করতে হয়।
এই অধঃপতিত গুরু মীননাথকে আত্মপ্রত্যয়ে ফিরিয়ে এনে তার শিষ্য গোরক্ষনাথ কীভাবে কদলীরাজ্য থেকে তাকে মুক্ত করে আনেন তারই চমকপ্রদ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে গোরক্ষবিজয় কাব্যে।
গোরক্ষনাথ নর্তকীর বেশে মৃদঙ্গতালে মহাজ্ঞানের সূত্র স্মরণ করিয়ে গুরুকে স্বচেতনায় ফিরিয়ে আনেন।
ময়নামতী-গোপীচন্দ্রের গানে গার্হস্থ্য জীবনের আধারে যোগজীবনের নির্দেশিকা স্থান পেয়েছে।
নারীসিদ্ধা গোরক্ষশিষ্যা রানি ময়নামতী স্বামী মানিকচন্দ্রকে স্বল্পায়ুর ভবিতব্য থেকে ফেরাবার জন্য ভোগজীবন ত্যাগ করে সন্ন্যাসজীবন গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। রাজা তা না মেনে অকালে মৃত্যুবরণ করেন।
পরে পুত্র গোপীচন্দ্রকে একই কারণে তিনি, তার রাজ্যে ঝাড়ুদারের কাজে নিযুক্ত, যোগী হাড়িপার শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে বলেন। অনিচ্ছাসত্ত্বেও শিষ্যত্ব নিয়ে গোপীচন্দ্র ১২ বছরের জন্য গৃহছাড়া হন। পরে হীরা নটীর মোহপাশ লঙ্ঘন করে সংসারে ফিরে আসেন।
গোপীচন্দ্র তার পত্নীদের যোগবিভূতি দেখিয়ে চমৎকৃত করার লোভে পড়ে গুরু হাড়িপার ক্রোধে পড়েন। এতে বিরক্ত গোপীচন্দ্র স্ত্রীদের পরামর্শে গুরুকে মাটিতে পুঁতে ফেলেন।
পরে হাড়িপার শিষ্য কানুপা গোরক্ষের কাছ থেকে এ কথা শুনে গুরুকে উদ্ধার করেন। গোপীচন্দ্র কী কৌশলে হাড়িপার ক্রোধ থেকে রেহাই পেয়ে চিরতরে সন্ন্যাস নিলেন, তারই বিবরণ আছে এই গল্পে।
গোরক্ষবিজয় সংক্রান্ত ১৭টির মতো পুথি অবিভক্ত বাংলা থেকে সংগৃহীত হয়েছে। সংগ্রাহকরা হলেন নলিনীকান্ত ভট্টশালী (১টি পুথি), আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (৮টি পুথি), আলি আহমদ (৭টি পুথি) এবং পঞ্চানন মন্ডল (১টি পুথি)।
এসব পুথির অধিকাংশই খণ্ডিত। নলিনীকান্ত ভট্টশালী সম্পাদিত গ্রন্থের নাম মীনচেতন এবং আবদুল করিম ও পঞ্চানন মন্ডল সম্পাদিত গ্রন্থের নাম যথাক্রমে গোরক্ষবিজয় ও গোর্খবিজয়।
গোরক্ষবিজয় কাব্যের রচনাকাল নিয়ে পন্ডিত মহলে বিতর্ক আছে। শেখ ফয়জুল্লাহ ছাড়া কবীন্দ্র, ভীমসেন ও শ্যামদাসের নাম ভণিতায় পাওয়া যায়।
তবে ভণিতায় নামের সংখ্যাধিক্যের হিসেবে ফয়জুল্লাহকেই গোরক্ষবিজয়ের কবি হিসেবে মনে করা হয়, অন্যরা ছিলেন গায়ক।
প্রাপ্ত পুথির ভিত্তিতে ময়নামতী-গোপীচন্দ্রের গানের ৩ জন কবির সন্ধান পাওয়া যায়। তারা হলেন, দুর্লভ মল্লিক, ভবানী দাস ও সুকুর মহম্মদ।
দুর্লভ মল্লিকের কাব্যের নাম গোবিন্দচন্দ্র গীত; সম্পাদনা করেন শিবচন্দ্র শীল। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর সম্পাদনায় ভবানী দাসের ময়নামতীর গান এবং সুকুর মহম্মদের গোপীচাঁদের সন্ন্যাস কাব্যদুটি ঢাকা সাহিত্য পরিষৎ থেকে প্রকাশিত হয়।
Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео mp4
-
Информация по загрузке: