শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়া ধর্ম : জীবনী / Sri Harichand Thakur and Matua Dharma : Biography
Автор: The Galposalpo
Загружено: 2022-03-29
Просмотров: 236291
This video is about Sri Harichand Thakur and Matua Dharma ( শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুর ও মতুয়া ধর্ম ). It's his Biography or Life Story (জীবনী / জীবন কাহিনী).
হরিচাঁদ ঠাকুরের আসল নাম হল হরিদাস বিশ্বাস। তাদের আদি পদবী বিশ্বাস হলেও ঠাকুরদার আমল থেকে ঠাকুর পদবীই তারা ব্যবহার করতেন। তিনি বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকাণ্ডের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন হরিচাঁদ ঠাকুর নামে। ১৮১২ সালের ১১ই মার্চ, বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার অন্তর্গত ওড়াকান্দির সফলাডাঙা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি সেই শক্তিমান অদ্বিতীয় পুরুষ, যিনি বাংলার বুকে হরিনামের মৃতপ্রায় ধারাটির মধ্যে সঞ্চারিত করেছিলেন মহানদীর মহাবেগ, স্থির জলরাশির মধ্যে তিনিই যেন নিয়ে এসেছিলেন মহাসমুদ্রের কল্লোল। তারই নেতৃত্বে বাংলাদেশের ওড়াকান্দি, মল্লকান্দি, ঘৃতকান্দি, কুমারিয়া প্রভৃতি অঞ্চলের হাজার হাজার প্রান্তিক শ্রমজীবী মানুষ, সমাজের নিম্নবর্গের মানুষরা, সমাজের দলিত পতিত নিপীড়িত উপেক্ষিত মানুষরা, শ্রীচৈতন্যদেবের মতই এক অভূতপূর্ব ভাববাদী আন্দোলনের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তাই এই অজস্র অগণিত অনুগামীদের কাছে হরিচাঁদ ঠাকুর হয়ে উঠেছিলেন শ্রীচৈতন্যদেবের অবতারস্বরূপ।
তাঁর অনুগামীরা ডঙ্কা , সিঙ্গা, শঙ্খ, কাঁসর বাজিয়ে প্রবল গর্জন আর প্রচন্ড নাচের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বরের নামগানে এমনভাবে মত্ত থাকত যে সমাজের উচ্চ বর্ণের মানুষরা বিরক্ত হয়ে, বিদ্রূপ-ব্যঙ্গ করে হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুগামীদের নাম দিয়েছিল মত্ত। হরিচাঁদ ঠাকুর কিন্তু সানন্দে এই মত্ত শব্দটিকে ইতিবাচক ভঙ্গিমায় গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর প্রচারিত নতুন ধর্মমতের নাম দিয়েছিলেন মতুয়া ধর্ম। বলাবাহুল্য, মত্ত শব্দটি থেকেই মতুয়া শব্দটির উদ্ভব, অর্থাৎ মতুয়া কথাটির অর্থ হয়ে দাঁড়ায়, যারা হরিপ্রেমে মত্ত থাকেন, প্রবলভাবে মাতোয়ারা থাকেন, তারাই হলেন মতুয়া।
মতুয়া ধর্ম আসলে বৌদ্ধ ধর্ম এবং বৈষ্ণব ধর্মের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সূক্ষ সনাতন ধর্ম, যাকে ভক্তরা অভিহিত করেছেন হিন্দুধর্মের প্রকৃত সংস্কার বলে। মতুয়া ধর্ম নামে এই সূক্ষ সনাতন ধর্মের অবতারনার জন্য ভক্তদের কাছে তিনি হলেন শ্রীচৈতন্যদেব এবং গৌতম বুদ্ধের যৌথ অবতার। তবে বৌদ্ধ ধর্ম এবং বৈষ্ণব ধর্মে ঈশ্বর-সাধনপথের যে জটিলতা আছে, তা তিনি মতুয়া ধর্মে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করেছেন। অর্থাৎ অন্যদিক দিয়ে একথাটি বলাই যায় যে, তার মতুয়া ধর্মে ঈশ্বর সাধনপথটি সহজ সরল আড়ম্বরহীন, আর সে জন্যই সাধারণ প্রান্তিক মানুষদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতাটা ছিল অনেক বেশি।
যাইহোক, হরিচাঁদ ঠাকুর সাধারণ ভক্ত মানুষদের জন্য মতুয়া ধর্মের বাহ্যিক কয়েকটি বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করতে বলেছেন। এই বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে একটু আলোচনা করলে আমরা হরিচাঁদ ঠাকুরকে আরো পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস।
আমার মতে, তিনি তিনটি বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রথমত তিনি বলেছেন, গৃহীর কর্মই ধর্ম। সংসারী শ্রমজীবী মানুষদের কর্ম না করলে চলবে না। সুতরাং হরিনাম করতে করতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে কর্মে। সেজন্যই তিনি বলেছেন ‘হাতে কাম মুখে নাম’।
দ্বিতীয়তঃ ভারতীয় পরম্পরায় যে চতুরাশ্রমের কথা আছে, তার মধ্যে, হরিচাঁদ ঠাকুরের মতে, গার্হস্থ্য আশ্রমই শ্রেষ্ঠ আশ্রম। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন যে, সংসারী মানুষের জীবনে সুখ-শান্তি ও উন্নতির মধ্যেই রয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের যথার্থ উন্নতি। তাই তিনি তাঁর ভক্তদের গৃহ ধর্ম পালনের কথা সর্বাগ্রে বলেছেন।
তৃতীয়তঃ হরিচাঁদ ঠাকুর সমাজে নারীকে তার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মনুবাদী শাস্ত্রে যেখানে নারীকে নরকের দ্বার বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ্যবাদী সমাজতন্ত্রে যেখানে নারীকে সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থেকে শুধু পতিসেবা করে যাওয়াকে যেখানে নারীর জীবনের ব্রত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে হরিচাঁদ ঠাকুর কিন্তু নারীজাতিকে এই অসম্মানের নাগপাশের বন্ধন থেকে মুক্ত করে, তাঁদেরকে তিনি সাম্যবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে তাদের স্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সর্বোপরি একটি কথা বলতেই হবে যে, সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের, দলিত অপমানিত মানুষদের আত্মশক্তির জাগরণের উপর তিনি সবচাইতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে দলিত পতিত মানুষদের উপরে জোর করে চাপিয়ে দেওয়া শত শতাব্দীর ধর্মীয় বিধি-নিষেধ, সেই বিধিনিষেধের শৃঙ্খল ছিন্ন করতে, অস্পৃশ্যতা নির্মূল করতে, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আত্মশক্তির জাগরণ দরকার। মতুয়া ধর্মে তিনি তাই দলিত মানুষদের সর্বতোভাবে তৈরি হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন বিদ্যার্জনের কথা, তিনি বলেছেন সংঘবদ্ধতার কথা, তিনি বলেছেন ঐক্যবদ্ধভাবে অধিকার অর্জনের কথা।
১৮৭৮ সালের ১৩ই মার্চ ভোরবেলা তিনি প্রয়াত হন। প্রয়ানের আগেই তিনি তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার ভার দিয়ে যান বড়ছেলে শ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের উপর। পিতার নির্দেশ তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন।
তথ্যঋণ:-
১) শতবর্ষে শ্রীশ্রী হরিলীলামৃত
Edited By শ্রী সন্তোষ কুমার বারুই
২) দলিতের দুর্দশায় শ্রীশ্রী হরি-গুরুচাঁদ ঠাকুর
By বিশুদ্ধ নন্দন কবিরাজ
৩) সববাংলায়
৪) মতুয়া প্রবন্ধমালা
Edited by শ্রী সন্তোষ কুমার বারুই
৫) মতুয়ার বার্তা ব্লগস্পট
#harichand #matua #হরিচাঁদ
Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео mp4
-
Информация по загрузке: