কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ি
Автор: Daily Comilla News
Загружено: 2023-08-09
Просмотров: 75
নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানীর নবাববাড়িঃ কুমিলা জেলার লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁওয়ের সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে ১৮৩৪ইং সালে নওয়াব ফয়জুন্নেসা জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষাগুরু মৌলভী ওস্তাদ তাজউদ্দীন মিয়ার তত্ত্বাবধানে তিনি ঘরে বসে বাংলা, আরবী, ফার্সি ও সংস্কৃতি ভাষা চর্চা করেন। নওয়াব ফয়জুন্নেসার স্বামীর নাম ছিল গাজী চৌধুরী। স্বামীর বাড়ি বরুড়া উপজেলার বাউকসারে। তার দুই কন্যা সন্তান আরশাদুন্নেছা ও বদরুন্নেছা। নওয়াব ফয়জুন্নেসা ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা নবাব। তার আওতায় ১৪টি মৌজা ছিল যা দক্ষিণ কুমিল্লার অন্তর্গত বিস্তৃত এলাকা নিয়ে গঠিত। ১৮৭৩ সালে কুমিল্লা শহরের নানুয়া দিঘীর পশ্চিম পাড়ে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা কালক্রমে শৈলরাণী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে। ঐ বছরেই তিনি কুমিল্লার বাদুর তলায় ফয়জুন্নেসা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় নামে পরিচিত। তার জমিদারীর আওতায় ১৪টি কাচারী সংলগ্ন এলাকায় ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি পশ্চিমগাঁয়ে তার বাড়ির পাশে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে ফয়জুন্নেছা এবং বদরুনেসা স্কুল নামে পরিচিত এবং একটি হাই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। যা বর্তমানে নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ নামে পরিচিত।
জমিদার রাখাল রাজার বাড়িঃ কুমিল্লার মনোহরগেঞ্জর হাসনাবাদ ইউনিয়নের কমলপুরের জমিদার রাখাল রাজার আন্দার মানিক বাড়িটি প্রায় ২’শ বছরের পুরাতন। সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে এ বাড়িটি। ভূমি রেকর্ড পত্রানুযায়ী ১৭শ শতাব্দীর শেষ দিকে তৎকালীন জমিদার রাখাল রাজা এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। জমিদার রাখাল রাজার সৈন্যরা তাকে খুশি করার জন্য সুন্দরী রমণীদেরকে ধরে এনে তাকে উপঢৌকন হিসেবে দিতেন। শ্লীনতাহানির পর বহু মুসলিম নারীকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে জমিদারের বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অনেক মুসলিম পরিবার এলাকা ছেড়ে চলে যায় অন্যত্রে। অত্যচারের মাত্রা বেড়ে গেলে এক সময় বিভিন্ন এলাকার মুসলমানরা একত্রিত হয়ে রাখাল রাজার বিরুদ্ধে গড়ে তুলে আন্দোলন। এই আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি হিন্দু জমিদার রাখাল রাজা। পরাজিত হয়ে স্বপরিবারে পালিয়ে যায় এলাকা ছেড়ে। বাড়িটির ছাদের আস্তর খসে পড়ছে। দু’তলা উঠার সিঁড়ি ভেঙ্গে গেছে। কামরা গুলোর ভিতরে উই পোকার মাটিতে ভরে গেছে।
নবাব হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরীর বাড়িঃ কুমিল্লা মহানগরীর দক্ষিণ চর্থায় অবস্থিত নবাব হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরীর বাড়ি। এ জমিদার বাড়ির সদস্য জুলফিকার হায়দার জানান, নবাব হোচ্ছাম হায়দার চৌধুরী দানবীর জমিদার ছিলেন। কুমিল্লায় তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ মানুষের কল্যাণে অনেক দান করে যান। লাকসামের নওয়াব ফয়জুন্নেছা, বরুড়ার ভাউকসার জমিদার বাড়ি আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ বলে তিনি জানান।
ভৈরব চন্দ্র সিংহের জমিদার বাড়িঃ চান্দিনার মহিচাইলে অবস্থিত ভৈরব চন্দ্র সিংহের জমিদার বাড়ি। ২শ’ বছর পুরাতন বাড়িটি এখন ভেঙ্গে পড়ছে। ভৈরব চন্দ্রের নাতি ক্ষিতিশ চন্দ্র সিংহ (৯৫)। তিনি জানান, আমাদের জমিদারী ছিলো চান্দিনা, বরুড়া, দাউদকান্দি ও দেবিদ্বারে। ভৈরব চন্দ্র সিংহ প্রজা বান্ধব জমিদার ছিলেন বলে তিনি জানান। তাদের পূর্ব পুরুষের স্মৃতিচিহ্ন বাড়িটি রক্ষায় তিনি সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
মজিদপুর জমিদার বাড়িঃ কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মজিদপুর জমিদার বাড়িতে পাশাপাশি কয়েকটি ভবন রয়েছে। স্থানীয়দের থেকে জানা যায়, ইংরেজ আমলের প্রথম দিকে লর্ড কর্ণওয়ালিস জায়গীরদারী প্রথাকে বিলুপ্ত করে জমিদারী প্রথা প্রচলন করেন। তিতাসের মজিদপুরে জমিদার বাড়ির মোট ১৭টি অট্টালিকার মধ্যে ৪টি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। জমিদার বাড়ির আশেপাশে ১টি দীঘি এবং ছোট বড় মিলে ২০টি পুকুর রয়েছে। বর্তমানে তাদের কোন উত্তরাধিকারীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান সৃষ্টির পরই হিন্দু জমিদাররা তাদের সবকিছু ফেলে ভারতে চলে যান। বর্তমানে সবগুলো ভবনই জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তবে ভবনগুলো বেশ কারুকার্য খচিত এবং বিভিন্ন খুপড়ির অস্তিত খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনগুলোর মাঝে সুড়ঙ্গ পথও রয়েছে।
জাহাপুর জমিদার বাড়িঃ মুরাদনগরে ৪০০ বছর আগের জাহাপুর জমিদার বাড়িটি এখনও আছে। এ বংশের ১২ তম বংশধর প্রফেসর অঞ্জন রায় বলেন, আমাদের বংশের উল্লেখযোগ্য বংশধর হচ্ছেন-বাবু রাজ চন্দ্র রায়, আনন্দ চন্দ্র রায় ও গিরীশ চন্দ্র রায়। গোমতী নদীর পাড়ে এই জাহাপুর। জমিদার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মুখোমুখি অবস্থানে দুটি সিংহ। বাড়ির প্রথম বিল্ডিংটি তিন তলা। পুরোটাই ইট-সুড়কি দিয়ে নির্মিত। এরকম আরও ৯টি বিল্ডিং ছিল। ২টি সম্পুর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। কিছু জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করেই একটি মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। এটি নাট মন্দির। এ বাড়িটির বয়স ৪ শ’ বছর হলেও তাদের জমিদারির বয়স দেড়শ বছর। জমিদারি লাভের পূর্বেই তারা প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক ছিলেন। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাটের ব্যবসা করতেন। ১৮৬২ সালে এ বংশের লোকেরা জমিদারি লাভ করেন।
মুরাদনগরের থোল্লার জমিদার ছিলেন মীর আশরাফ আলী। তার জমিদারী বিস্তৃত ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, ত্রিপুরা, বাকেরগঞ্জ, ও ময়মনসিংহ জেলায়। মুরাদনগরের আরেকটি জমিদার বাড়ি ভুবনঘর মিয়া বাড়ি। আওয়ামীলীগ নেতা ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন এ বংশের সন্তান। তাদের মধ্যে বিখ্যাত জমিদার ছিলেন আবদুস সোবহান আবদু মিয়া। এ বংশেরই সন্তান সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএকেএম সাদেক। তাদের জমিদারী মুরাদনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপৃত ছিল। মুরাদনগরের বাঙ্গরা জমিদার বাড়ি। এ বংশের প্রথম জমিদার ছিলেন উমালোচন মজুমদার। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাঙ্গরা উমালোচন উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত শান্তিমনি হাসপাতাল তাদের অমর কীর্তি।

Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео mp4
-
Информация по загрузке: