এস আই আর আসলে ২০২৫ এর সবথেকে বড় কেলেঙ্কারি আর প্রশাসনিক ব্যর্থতা।
Автор: বাংলা বাজার BANGLA BAZAR
Загружено: 2025-12-30
Просмотров: 29503
যে কোনও গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রধান স্তম্ভ হলো একটা স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রান্সপারেন্ট অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ভোটার তালিকা। কিন্তু ২০২৫ সালে নির্বাচন কমিশন এর 'স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন' বা এস আই আর (SIR) প্রক্রিয়া ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অভূতপূর্ব সংকট তৈরি করেছে। যে প্রক্রিয়াটার লক্ষ্য ছিল ভোটার তালিকাকে ত্রুটিমুক্ত আপডেট করা, সেই প্রক্রিয়ার ভেতরেই লুকিয়ে আছে এক সাংঘাতিক নকশাগত ত্রুটি ডিজাইন ফল্ট আর তার সঙ্গে মিশেছে চরম প্রশাসনিক অদূরদর্শিতা আজ কোটি কোটি ভারতীয় নাগরিকের ভোটাধিকারকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে, কেবল নয় এক চুড়ান্ত বে আইনি কাজ চলছে। বিশেষ করে অসম আর ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর মধ্যে ভোটার সংশোধনের পদ্ধতির আর তার ফলাফল, আউটকামের যে ফারাক দেখা গেছে, তা এক ন্যাচারাল এক্সপেরিমেন্টের মতো কাজ করেছে, যা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দেয় যে এস আই আর প্রক্রিয়াটার মধ্যেই এক বিরাট গলদ লুকিয়ে আছে । অসমের ক্ষেত্রে এই ভয়াবহ ছবিটা কিন্তু দেখা যাচ্ছেনা, কারণ সেখানে এস আই আর-এর বদলে এক আলাদা আর অনেক বেশি সাধারণ সরল পদ্ধতি নেওয়া হয়েছিল। এই বৈষম্য আর গণহারে ভোটার বাতিলের এই মহাযজ্ঞই এই মুহুর্তে ভারতের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী কেলেঙ্কারি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ২০২৫ সালের ২৫শে অক্টোবর সারা দেশে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এস আই আর প্রক্রিয়া শুরু করার ঘোষণা হয়েছিল। এর মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল দ্রুত নগরায়ন, উচ্চ হারের পরিযান বা মাইগ্রেশন এবং ভুয়ো বা জাল ভোটারদের চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। কমিশন দাবি করেছিল যে আধার সংযোগ এবং আধুনিক এআই চালিত সফটওয়্যারের মাধ্যমে এক নিখুঁত ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই এর নীতি আর প্রয়োগ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এস আই আর প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এটা একটা 'ডি নোভো' (De-novo) পদ্ধতি, যার অর্থ হলো ভোটার তালিকাকে নতুন করে তৈরি করা, যেখানে ভোটারকেই তার নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার দায়ভার বহন করতে হয় । সাধারণত ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) তার আগের সংশোধিত তালিকা নিয়ে মানুষের দরজায় দরজায় যান এবং দেখেন যে সেখানে নতুন কেউ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কিনা অথবা কেউ মারা গিয়েছেন কিনা। মরে গেলে বাদ দিতে হবে, নতুন ভোটারকে জুড়তে হবে। এই তো। কিন্তু এস আই আর ২০২৫-এর ক্ষেত্রে নিয়ম করা হয়েছিল যে, প্রতিটা ভোটারকে নতুন করে একটা 'এনুমারেশন ফর্ম' ভরতে হবে। এর পাশাপাশি এক কঠোর শর্ত, যদি কোনো ভোটারের নাম ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় না থাকে বা তিনি যদি তার পূর্বপুরুষের সাথে সংযোগ প্রমাণ করতে না পারেন, মানে বাবা মার নাম এর সঙ্গে লিংক না করাতে পারেন, তবে তাকে নতুন করে নাগরিকত্বের একগুচ্ছ প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। এই যে 'প্রমাণের বোঝা' সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেটাই আসলে এই কেলেঙ্কারির মূল উৎস । বিহারেই প্রায় ৬৫ লক্ষ ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়, যা নিয়ে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে । নির্বাচন কমিশন যখন সারা দেশে এস আই আর চালাচ্ছে, ঠিক একই সময়ে উত্তরপ্রদেশ রাজ্য নির্বাচন কমিশন (SEC) পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য সমান্তরালভাবে ভোটার তালিকা সংশোধন করছিল। এই দুটো প্রক্রিয়ার ফলাফল ছিল আকাশ-পাতাল পার্থক্য। যেখানে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের এস আই আর রিপোর্টে উত্তরপ্রদেশের গ্রামীণ ভোটার সংখ্যা দেখানো হয়েছে মাত্র ১২.৬ কোটি, সেখানে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তালিকায় সেই সংখ্যাটি ছিল ১৬.১ কোটি। বাকি চার কোটি এলো কোথ্বেকে? মানে কেন্দ্রীয় কমিশনের তথাকথিত 'শুদ্ধিকরণ' প্রক্রিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি ভোটারের নাম বিলকুল গায়েব হয়ে গেছে । এই পার্থক্যের কারণ হলো পদ্ধতির ভিন্নতা, মানে যে পদ্ধতিতে এস আই আর হচ্ছে তা সাধারণ গণণা থেকে আলাদা। রাজ্য নির্বাচন কমিশন যখন পঞ্চায়েত নির্বাচনের তালিকা তৈরি করে, তখন তারা কোনো এনুমারেশন ফর্ম বা নাগরিকত্বের প্রমাণের কড়াকড়ি করেনি। তারা শুধু যাচাই করেছে মানুষজন সেই এলাকায় বসবাস করেন কিনা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন এস আই আর-এর মাধ্যমে প্রতিটা নাগরিককে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এই যে সাড়ে তিন কোটি মানুষের অমিল, এটা কোনো সাধারণ বিচ্যুতি নয়। এটাই প্রমাণ করে যে এস আই আর প্রক্রিয়ার নকশাটাই এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করার চেয়ে বাদ দেওয়ার প্রবণতাই বেশি থাকে । মানে এটা একটা ভোটার বাদ দেবার কেলেঙ্কারি। একই সময়ে অসমের ক্ষেত্রেও এক্কেবারে আলাদা ছবি দেখা গেছে। অসমে এস আই আর প্রক্রিয়াটা পরিচালনা করাই হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল যে অসমে আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসি প্রক্রিয়া চলছে এবং সেখানে নাগরিকত্ব আইনের আলাদা কিছু ধারা রয়েছে। ফলে অসমে করা হয়েছিল 'স্পেশাল রিভিশন' বা এস আর (SR)। এই এস আর পদ্ধতিতে কোনো এনুমারেশন ফর্ম বা নাগরিকত্বের কঠোর পরীক্ষা ছিল না। বুথ লেভেল অফিসাররা তাদের হাতে থাকা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বাড়ি বাড়ি গিয়েছেন এবং যারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের নাম তালিকায় বহাল রেখেছেন। এর ফলাফল হলো, অসমের ২.৫ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ১০.৫৬ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, যার অধিকাংশই মৃত্যু বা বাসস্থান পরিবর্তনের কারণে। অর্থাৎ অসমে ভোটার বাদ পড়ার হার মাত্র ৪ শতাংশের কাছাকাছি, যেখানে এস আই আর হওয়া রাজ্যগুলোতে এই হার কোথাও ১৫ শতাংশ আবার কোথাও ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে । এস আই আর ২০২৫-এর ফলে সারা ভারতে ভোটার বাদ পড়ার সংখ্যা কেবল এক বিশাল ট্র্যাজেডি নয় এটা একটা কেলেঙ্কারি, যা মোদি শাহের নির্দেশেই করা হয়েছে।
Доступные форматы для скачивания:
Скачать видео mp4
-
Информация по загрузке: